Pteris-এর জনন (Reproduction of Pteris)
Pteris উদ্ভিদ অঙ্গজ, অযৌন এবং যৌন জননের মাধ্যমে বংশবৃদ্ধি করে। এদের মধ্যে। স্পোরোফাইট উদ্ভিদে অঙ্গজ ও অযৌন জনন প্রক্রিয়া ঘটে থাকে এবং গ্যামিটোফাইট উদ্ভিদে যৌন জনন প্রক্রিয়া ঘটে থাকে।
১। অঙ্গজ জনন (Vegetative reproduction) :
অনেক সময় পরিণত রাইজোমের অংশ বিশেষ মরে যায় এবং অপরিণত শাখাগুলো বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। বিচ্ছিন্ন শাখাগুলো নতুন মূল ও পাতা সৃষ্টির মাধ্যমে পৃথক স্পোরোফাইটিক উদ্ভিদে পরিণত হয়।
২। অযৌন জনন (Asexual reproduction) :
Pteris উদ্ভিদে স্পোর সৃষ্টির মাধ্যমে অযৌন জনন সম্পন্ন হয় । Pteris উদ্ভিদ পরিণত হলে এর পত্ৰক বা পিনার নিম্নতলের দু’কিনারা বরাবর ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র স্পোরাঞ্জিয়া (sporangia , একবচনে sporangium) উৎপন্ন হয়। স্পোরোঞ্জিয়ামে অভ্যন্তরে রেণু বা স্পোর (spore) নামক অযৌন জনন কোষ (asexual reproductive bodies) উৎপন্ন হয়।
স্পোরোঞ্জিয়াগুলো গুচ্ছাকারে অবস্থান করে এবং স্পোরোঞ্জিয়ামের গুচ্ছকে সোরাস (sorus, বহুবচনে sori) বলা হয়। প্রতিটি সোরাস দেখতে বাদামি বর্ণের ও বৃক্কাকার। যে টিস্যু হতে স্পোরোঞ্জিয়াম উৎপন্ন হয় সে টিস্যুকে প্লাসেন্টা (placenta) বা অমরা বলে।
পত্রক বা পিনার কিনারা ভেতরের দিকে একটু বেঁকে এসে সোরাইকে ঢেকে রাখে। ফলক প্রান্তের এ ঢাকনি অংশকে ফলস্ ইন্ডুসিয়াম (false indusium) বলা হয়। সোরাস উৎপন্নকারী পাতাকে স্পোরোফিল (sporophyll) বলে। পরিণত স্পোরোঞ্জিয়াম একটি বৃন্ত (স্পোরাঞ্জিয়োফোর) এবং একটি উপবৃত্তাকার ক্যাপসিউল অংশ নিয়ে গঠিত। বৃন্তের মাথায় ক্যাপসিউল অবস্থিত।
ক্যাপসিউল নিম্নলিখিত অংশ নিয়ে গঠিত:
অ্যানুলাস (Annulus) : ক্যাপসিউল প্রাচীরের অধিকাংশ কাইটিনযুক্ত ও পুরু এক কোষস্তর বিশিষ্ট আবরণে আবৃত থাকে। এই পুরু আবরণকে অ্যানুলাস বলে। এটি পানিগ্রাহী।
স্টোমিয়াম (Stomium) : ক্যাপসিউলের বৃন্ত সংলগ্ন কিছু অংশে পাতলা প্রাচীরবিশিষ্ট বলয়াকার কোষ থাকে, এ অংশকে স্টোমিয়াম বলে। স্পোর নির্গমনের সময় স্টোমিয়াম বরাবর স্পোরাঞ্জিয়াম ফেটে যায় এবং স্পোর নির্গমন হয়।
বৃন্ত (Stalk) : স্পোরাঞ্জিয়ামের গোড়ায় একটি খাটো বৃন্ত আছে।
স্পোর উৎপাদন ও বিস্তার (Spore production and spread) :
ক্যাপসিউলের ভেতরের টিস্যুকে বলা হয় স্পোরোজেনাস টিস্যু (sporogenous tissue)। এ টিস্যু হতে স্পোর মাতৃকোষ উৎপন্ন হয়। স্পোর মাতৃকোষ ডিপ্লয়েড (2n)। প্রতিটি স্পোরাঞ্জিয়ামে ১৬টি মাতৃকোষ থাকে। মায়োসিস বিভাজনের মাধ্যমে স্পোর মাতৃকোষ হতে হ্যাপ্লয়েড (n) স্পোর উৎপন্ন হয়। একটি স্পোরাঞ্জিয়াম থেকে ৬৪টি স্পোর সৃষ্টি হয়। পরিণত স্পোরগুলো গাঢ় বাদামি বর্ণের এবং একই বৈশিষ্ট্যের। এগুলো দ্বিস্তরী ও জার্মপোর (germpore) যুক্ত। স্পোর সৃষ্টি হওয়ায় স্পোরাঞ্জিয়ামে পানি ধারণ ক্ষমতা কমে যায় ফলে স্পোরাঞ্জিয়াম শুষ্ক হয়ে যায় এবং অ্যানুলাসের কোষগুলো কুঞ্চিত হতে থাকে।
স্পোরাঞ্জিয়াম শুষ্ক হয়ে গেলে এর পশ্চাদ্ভাগের অ্যানুলাসে টান পড়ে এবং স্টোমিয়াম আড়াআড়ি ফেটে যায়। আর্দ্র অ্যানুলাস পুনরায় পূর্বস্থানে ফিরে আসে। অ্যানুলাসের এদিক-ওদিক চলাচলের ফলে স্পোরাঞ্জিয়াম হতে স্পোরের বিস্তার ঘটে এবং স্পোরগুলো বাইরে ছড়িয়ে পড়ে।
গ্যামিটোফাইটিক উদ্ভিদ (Gametophytic plant) :
Pteris এর স্পোরোফাইট থেকে সৃষ্ট স্পোর বা রেণু হলো লিঙ্গধর বা গ্যামিটোফাইটের প্রথম কোষ। হ্যাপ্লয়েড স্পোর অনুকূল পরিবেশে কোনো আর্দ্র বস্তুর সংস্পর্শে আসলে অঙ্কুরিত হয় এবং ক্রমাগত মাইটোটিক বিভাজনের মাধ্যমে হৃৎপিণ্ডাকার সবুজ অঙ্গের সৃষ্টি করে। এটি ফার্নের গ্যামিটোফাইট। হৃৎপিণ্ডাকার এ গ্যামিটোফাইটকে প্রোথ্যালাস (prothallus) বলা হয়। প্রোথ্যালাসের নিম্নপৃষ্ঠের নিম্নাংশ হতে অনেক এককোষী রাইজয়েড উৎপন্ন হয়। রাইজয়েডগুলো প্রোথ্যালাসকে মাটির সাথে সংযুক্ত করে এবং মাটি হতে প্রোথ্যালাসকে খাদ্যরস সরবরাহ করে। প্রোথ্যালাসের উপরের দিকে একটি গভীর খাঁজ আছে। একে অগ্রস্থ খাঁজ (apical notch) বলে। প্রোথ্যালাস সবুজ বর্ণের, বহুকোষী, স্বতন্ত্র ও স্বভোজী উদ্ভিদ। প্রোথ্যালাস উভলিঙ্গ অর্থাৎ একই দেহে পুং ও স্ত্রী জনন অঙ্গ অবস্থান করে। প্রোথ্যালাসের অঙ্কীয়তলে খাঁজের কাছে স্ত্রীজননাঙ্গ (আর্কিগোনিয়াম) এবং রাইজয়েডের সাথে মিশ্রিত অবস্থায় পুংজননাঙ্গ (অ্যান্থেরিডিয়াম) উৎপন্ন হয়। একই থ্যালাসে পুং ও স্ত্রী জননাঙ্গ থাকে বলে একে সহবাসী উদ্ভিদও বলা হয়।
৩। যৌন জনন (Sexual reproduction) :
প্রোথ্যালাসে যৌন জনন সম্পন্ন হয়। এর নিম্নতলে খাঁজের কাছাকাছি স্থানে আর্কিগোনিয়াম (স্ত্রীজননাঙ্গ) উৎপন্ন হয়। যে অংশ হতে রাইজয়েড উৎপন্ন হয় সে অংশে অ্যান্থেরিডিয়াম (পুংজননাঙ্গ) উৎপন্ন হয়, কাজেই প্রোথ্যালাস সহবাসী।
আর্কিগোনিয়াম (Archegonium) :
স্ত্রীজননাঙ্গকে আর্কিগোনিয়াম বলে। আর্কিগোনিয়াম ফ্লাস্ক আকৃতির। এটি একটি গ্রীবা (neck) এবং একটি উদর (venter) সহযোগে গঠিত। উদরের নিম্নাংশে একটি ডিম্বাণু (egg or oosphere) আছে এবং ডিম্বাণুর উপর একটি উদরীয় নালিকা কোষ (ventral canal cell) আছে। গ্রীবায় একাধিক গ্রীবা নালিকা কোষ (neck canal cell) আছে। আর্কিগোনিয়াম পরিণত হলে গ্রীবা নালিকা কোষ এবং উদরীয় নালিকা কোষ বিগলিত হয়ে একটি নালী পথ গঠন করে এবং উদরে শুধু ডিম্বাণু থাকে। এই নালী পথটি মিউসিলেজ ও ম্যালিক আসিড দিয়ে পূর্ণ থাকে।
অ্যাস্থেরিডিয়াম (Antheridium) :
পুংজননাঙ্গকে অ্যান্থেরিডিয়াম বলে। অ্যান্থেরিডিয়াম গোলাকৃতির। এর ভেতরে ২০-৫০ টি শুক্রাণু মাতৃকোষ বা অ্যান্ড্রোসাইট (androcyte) থাকে। মাতৃকোষগুলো একটি বন্ধ্যা আবরণ দিয়ে পরিবেষ্টিত থাকে। আবরণটি ৩টি কোষ দিয়ে গঠিত। গোড়ায় বলয় কোষ (ring cell) এবং উপরে ১টি ঢাকনা কোষ (cover cell) থাকে। প্রতিটি শুক্রাণু মাতৃকোষ রূপান্তরিত হয়ে প্যাচানো দণ্ডাকার বহু ফ্ল্যাজেলাযুক্ত শুক্রাণুতে (antherozoid) পরিণত হয়। অ্যান্থেরিডিয়ামের শীর্ষের আচ্ছাদনকারী ঢাকনা কোষ বিদীর্ণ হয় এবং শুক্রাণুগুলো বের হয়ে ফ্ল্যাজেলার সাহায্যে শিশির বা বৃষ্টির পানিতে সাঁতার কেটে আর্কিগোনিয়ার সন্নিকটে আসে।
নিষেক (Fertilization)
শিশির বিন্দু বা বৃষ্টির পানির সাহায্যে শুক্রাণুসমূহ আর্কিগোনিয়ামে পরিবাহিত হয়। আর্কিগোনিয়াম কতৃক ম্যালিক অ্যাসিড নিঃসৃত হয়, ফলে শুক্রাণু ডিম্বাণুর প্রতি আকৃষ্ট হয়। অনেক শুক্রাণু আর্কিগোনিয়ামের গ্রীবা নালী দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করলেও একটি শুক্রাণু ডিম্বাণুর সাথে মিলিত হয়ে নিষেকক্রিয়া সম্পন্ন করে। নিষেকক্রিয়ার ফলে ডিপ্লয়েড (2n) উস্পোর (oospore) উৎপন্ন হয়। এভাবে নিষেকের ফলে উস্পোরে পূর্ণ ক্রোমোজোম সংখ্যা ফিরে আসে এবং সাথে সাথে ডিপ্লয়েড বা স্পোরোফাইটিক পর্যায় শুরু হয়।
নতুন স্পোরোফাইটিক উদ্ভিদ (Regeneration of sporophytic plant) :
জাইগোট বা উস্পোর স্পোরোফাইটের প্রথম কোষ। ঊস্পোর পুনঃ পুনঃ মাইটোটিক কোষ বিভাজনের মাধ্যমে বহুকোষী ভ্রূণ সৃষ্টি করে। ভ্রূণ ক্রমশ বিকশিত হয়ে মূল, কাণ্ড ও পাতাবিশিষ্ট নতুন স্পোরোফাইট উদ্ভিদের জন্ম দেয়। মূল মাটিতে প্রবেশের পর প্রোথ্যালাস শুকিয়ে নষ্ট হয়ে যায় এবং স্পোরোফাইটিক উদ্ভিদটি পূর্ণ Pteris উদ্ভিদে পরিণত হয়।
আরও দেখুন...